০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আমাদের অদেখা এক হাহাকার

দক্ষিণাঞ্চলের দুঃখের নাম গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতাল!

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতাল ভব

হাসপাতালে নার্স ও কর্মচারীর পাঁচটি পদ থাকলেও বর্তমানে দুজন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে নার্স (পুরুষ) আবদুল আজিজ ও ওয়ার্ড বয় রাকিবুল হাসান এখানে পালা করে কাজ করেন। নার্স (মহিলা) দুজনের মধ্যে একজন মাতৃত্বজনিত ছুটিতে রয়েছেন, অপরজন নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছেন। পরিসংখ্যানবিদও নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছেন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এরপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী শওকত মহীবুর রব হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার জন্য ২ কোটি ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬০১ টাকা বরাদ্দ চান। ওই বরাদ্দ এখনো দেওয়া হয়নি। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন। চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও এখনো তা পূরণ করা হয়নি।

একটি বা দুটি নয়, আছে ছয়টি ভবন। এর মধ্যে চারটি ভবনই দ্বিতল। কিন্তু ভবনগুলোর জানালা ভাঙা। কয়েকটি ভবনের দরজাও ভাঙা। সীমানাপ্রাচীর নেই। ভবনগুলোর আশপাশে গরু চরছে।

এ দুরবস্থা কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতাল ও চিকিৎসা-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের। ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ১২টায় জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ সময় সেখানে কোনো চিকিৎসক, নার্স, নিরাপত্তাপ্রহরীকে পাওয়া যায়নি। এখানে হাসপাতালের মূল ভবন একটি, দাপ্তরিক ভবন একটি এবং চিকিত্সক ও নার্সদের আবাসিক কোয়ার্টার চারটি।

কুমিল্লা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৫ এপ্রিল তত্কালীন সাংসদ আবদুল গফুর ভূঁইয়া হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালের ১৩ জুন নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর জনবল নিয়োগ না করেই তত্কালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ এটি উদ্বোধন করেন। এ কারণে সেখানে কোনো রোগী যায়নি। এতে এলাকাটি ঝোপ-জঙ্গলে ছেয়ে যায়।

এ পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের ৪ জুন হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার জন্য সিভিল সার্জন মুজিবুর রহমান স্বাস্থ্যসচিবের কাছে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে জনবল নিয়োগসহ নানা ধরনের সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই বছরই সেখানে চিকিৎসকের ছয়টি এবং নার্স ও কর্মচারীর ছয়টি পদ অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয় হাসান ইবনে আমিন নামের এক চিকিৎসা কর্মকর্তাকে। তিনি এখানে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ছিলেন। এরপর এখানে আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রোমেনা আক্তারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নিলুফা আক্তার ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেষণে আছেন। আর রোমেনা আক্তার সপ্তাহে দুই দিন গোহারুয়া এবং চার দিন নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ও চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূন্য। এখানে কোনো শয্যা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামও সরবরাহ করা হয়নি।

 

লেখকের পরিচিতি

নাঙ্গলকোটে রোটারী ক্লাবের কলার হেন্ডওভার,নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

আমাদের অদেখা এক হাহাকার

দক্ষিণাঞ্চলের দুঃখের নাম গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতাল!

আপডেট সময় : ১২:১৩:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০১৭

হাসপাতালে নার্স ও কর্মচারীর পাঁচটি পদ থাকলেও বর্তমানে দুজন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে নার্স (পুরুষ) আবদুল আজিজ ও ওয়ার্ড বয় রাকিবুল হাসান এখানে পালা করে কাজ করেন। নার্স (মহিলা) দুজনের মধ্যে একজন মাতৃত্বজনিত ছুটিতে রয়েছেন, অপরজন নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছেন। পরিসংখ্যানবিদও নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছেন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এরপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী শওকত মহীবুর রব হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার জন্য ২ কোটি ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬০১ টাকা বরাদ্দ চান। ওই বরাদ্দ এখনো দেওয়া হয়নি। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন। চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও এখনো তা পূরণ করা হয়নি।

একটি বা দুটি নয়, আছে ছয়টি ভবন। এর মধ্যে চারটি ভবনই দ্বিতল। কিন্তু ভবনগুলোর জানালা ভাঙা। কয়েকটি ভবনের দরজাও ভাঙা। সীমানাপ্রাচীর নেই। ভবনগুলোর আশপাশে গরু চরছে।

এ দুরবস্থা কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতাল ও চিকিৎসা-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের। ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ১২টায় জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ সময় সেখানে কোনো চিকিৎসক, নার্স, নিরাপত্তাপ্রহরীকে পাওয়া যায়নি। এখানে হাসপাতালের মূল ভবন একটি, দাপ্তরিক ভবন একটি এবং চিকিত্সক ও নার্সদের আবাসিক কোয়ার্টার চারটি।

কুমিল্লা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৫ এপ্রিল তত্কালীন সাংসদ আবদুল গফুর ভূঁইয়া হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালের ১৩ জুন নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর জনবল নিয়োগ না করেই তত্কালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ এটি উদ্বোধন করেন। এ কারণে সেখানে কোনো রোগী যায়নি। এতে এলাকাটি ঝোপ-জঙ্গলে ছেয়ে যায়।

এ পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের ৪ জুন হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার জন্য সিভিল সার্জন মুজিবুর রহমান স্বাস্থ্যসচিবের কাছে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে জনবল নিয়োগসহ নানা ধরনের সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই বছরই সেখানে চিকিৎসকের ছয়টি এবং নার্স ও কর্মচারীর ছয়টি পদ অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয় হাসান ইবনে আমিন নামের এক চিকিৎসা কর্মকর্তাকে। তিনি এখানে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ছিলেন। এরপর এখানে আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রোমেনা আক্তারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নিলুফা আক্তার ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেষণে আছেন। আর রোমেনা আক্তার সপ্তাহে দুই দিন গোহারুয়া এবং চার দিন নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ও চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূন্য। এখানে কোনো শয্যা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামও সরবরাহ করা হয়নি।