কুমিল্লায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তাদের ভাষ্য, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬৫০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এবার জেলায় প্রায় সাত লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে। তবে কৃষকের অভিযোগ, ফলন ভালো হলেও বাজারে ধানে দাম কম।
এদিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার একই চিত্র। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে যেমন হাসি, তেমনি শ্রমিক সংকট আর বাজার মূল্যে না পাওয়ায় হাতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। এবছর সরকার প্রতিকেজি সারের দাম বাড়িয়েছে পাঁচ টাকা। আর ধানের দাম বাড়িয়েছে দুই টাকা। এমন অবস্থায় কৃষকের অভিযোগ, তারা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত আর দিকনির্দেশনার অভাবে খাদ্য স্বয়সম্পূর্ণ হতে বাধার মুখে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমান বাজারে কাচা ধান প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। যদিও সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা।
কৃষক রফিক আহমেদ বলেন, ধানের দাম কম থাকায় ভালো ফলনের পরও কৃষকের হাসি মলিন। সার, কীটনাশকসহ ধানকাটা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৮০০ থেকে হাজার টাকা। খরচ দিয়ে আর তেমন টাকা থাকছে না।
কৃষক ইলিয়াস, রনি মিয়ারা বলেছেন, খরচ বেশি হওয়ায় আমরা এবারও লাভের মুখ দেখবো না। বাপ-দাদার কৃষি ও দুই ভেলা খেয়ে-পড়ে বেঁচে খাকার জন্য বাধ্য হয়ে আমরা কৃষি কাজ করছি।
কৃষক জানান, বাজারে ধানের দাম মিলছে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, জেলার ১৭টি উপজেলায় কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় কৃষককে দুই কেজি করে বোরো ধানের বীজ বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষির উপকরণের কোনো ঘাটতি না থাকায় এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে।
তিনি জানান, কুমিল্লায় জেলায় চলতি রবি মৌসুমে বোরো ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো এক লাখ ৬০ হাজার ৮০০ হেক্টর। তবে আবাদ করা হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৬১ হাজার ৪৫৩ হেক্টর। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৫০ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় চাল সরবরাহ করা যাবে।
তিনি আরও জানান, এবছর নতুন বিনা ধান-২৫ নামে নতুন একটি ধানের জাত চাষ করা হয়েছে। ধানটি চিকন ও চাউল সরু। ভাতও সুস্বাদু। কুমিল্লায় ১২ হেক্টর জমিতে বিনা-২৫ ধান করা হয়েছে। যার ফলন অত্যন্ত ভালো। প্রতি হেক্টরে ধান মিলেছে সাত টনেরও বেশি। এ জাতটা খুব দ্রুত কুমিল্লায় ছড়িয়ে পড়বে। যাতে আগামীতে আরও বেশি ফলন পাবেন কৃষক।
কৃষিকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে উৎপাদন খরচ কমানো গেলে কৃষক লাভবান হবেন। কৃষকের মুখে সোনালী ফসলের উজ্জ্বল হাসি আবার ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষি বিভাগের।