একবার এক ব্যক্তির সাথে কথা হচ্ছিল। তাকে দ্বীনী কিতাবাদি পড়ার প্রতি উৎসাহ দিলে সে বলল, অল্প জানি, সেটাই ভালো। যতটুকু পারি, আমল করার চেষ্টা করি। বেশি জেনে জ্ঞানপাপী হয়ে মরতে চাই না!
এটি একটি ভুল চিন্তা। মুমিন এমন কথা বলতে পারে না। মুমিনের প্রতি ওহীর প্রথম বার্তাই তো ‘পড়ো’। পড়া ছাড়া মুমিনের গত্যন্তর নেই। দ্বীন অনুযায়ী চলতে হলে মুমিনকে পড়তে হবে, দ্বীন জানতে হবে।
হাঁ, জ্ঞানপাপী হওয়া হারাম। ইলম অনুযায়ী আমল না করা অন্যায়। মুমিন ইলম অনুযায়ী আমল করতে সচেষ্ট হবে। জানবেই আমলের নিয়তে। কারণ কিয়ামতের দিন যে চার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া বনী আদমের কদম সামনে বাড়বে না তার অন্যতম হল-
... وَعَنْ عِلْمِهِ مَاذَا عَمِلَ فِيهِ؟
...এবং তার ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে- সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে? -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ১৬৪৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪১৭
তবে এর অর্থ কখনোই এমন নয় যে, যেহেতু ইলম সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করা হবে- সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছি, সুতরাং ইলমই শিখব না; এমনকি প্রয়োজন পরিমাণ ইলমও শিখব না!
এ চিন্তাটি ভুল। যারা আলেম তাদেরই তো জানার শেষ নেই। আজীবন জানতে থাকতে হয়; সেখানে একজন সাধারণ মানুষ যদি বলে, যতটুকু জানি এতটুকুই যথেষ্ট আর জানার প্রয়োজন নেই, তাহলে তা হবে একটি আত্মঘাতী কথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ.
ইলম অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৪; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ১৫৪৫
قُلْ هَلْ یَسْتَوِی الَّذِیْنَ یَعْلَمُوْنَ وَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ.
বল, যারা জানে আর যারা জানে না উভয়ে কি সমান? -সূরা যুমার (৩৯) : ৯
আর জানা কথা, একজন মানুষ একবারে সবকিছু জেনে যায় না; একটু একটু করে শিখতে থাকতে হয়; আমরণ শিখলেও শেখা শেষ হয় না।
এখন কেউ যদি বলে, অল্প জানি, সেটাই ভালো। বেশি জেনে জ্ঞানপাপী হয়ে মরতে চাই না! এর অর্থ দাঁড়ায়, আমার প্রয়োজন পরিমাণ ইলম অর্জন হয়ে গেছে। আমার আর জানার প্রয়োজন নেই! অথচ স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা বলছেন-
وَ قُلْ رَّبِّ زِدْنِیْ عِلْمًا.
আর আপনি বলুন, হে আমার রব! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন। -সুরা ত্ব-হা (২০) : ১১৪
যেখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দুআ করতে বলা হচ্ছে সেখানে একজন সাধারণ উম্মতীর বিষয়ে কী বলা হবে!
আমরা কুরআনে মূসা আ. ও খাযির আ.-এর কাহিনী পড়েছি। সেখানে মূসা আ. খাযির আলাইহিস সালামের সঙ্গলাভের আবেদন করছেন এই বলে যে, আপনাকে যে ইলম দান করা হয়েছে আমি তা থেকে শিখতে চাই। কুরআনের ভাষায়-
قَالَ لَهٗ مُوْسٰی هَلْ اَتَّبِعُكَ عَلٰۤی اَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا.
মূসা তাকে বলল, আমি কি এই লক্ষ্যে আপনার অনুগমন করতে পারি যে, আপনাকে যে কল্যাণকর জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তা থেকে খানিকটা আমাকে শেখাবেন? -সূরা কাহ্ফ (১৮) : ৬৬
তো মূসা আ.-এর মত একজন মহান নবী খাযির আ. থেকে শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন সেখানে একজন সাধারণ মানুষ যদি বলে, আমার আর শেখার প্রয়োজন নেই- তা কি গ্রহণযোগ্য কথা হতে পারে?
আর যিনি ইলম অন্বেষণ করতে থাকেন এবং ইলম শিখে সে অনুযায়ী আমল-ইবাদত করেন আর যিনি ইলম অন্বেষণ করেন না- উভয়ে কখনো সমান হতে পারে না। আবু উমামা বাহেলী রা. বলেন-
ذُكِرَ لِرَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالآخَرُ عَالِمٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: فَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ.
قال الترمذي : هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দুই ব্যক্তির আলোচনা হল, একজন (সাধারণ) আবেদ, আরেকজন আলেম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের নগণ্য-সাধারণ একজনের উপর আমার মর্যাদা যেমন, একজন আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা তেমন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৮৫
আর ইলম শিখতে থাকা, ইলমের পথে চলা তো জান্নাতের পথে চলা। যে ইলমের পথে চলে তার জন্য তো আল্লাহ জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। সুতরাং আমাকে ইলম শিখতে থাকতে হবে আমরণ; নিজেকে শামিল রাখতে হবে ‘তালিবুল ইলম’ তথা ইলম অন্বেষণকারীর কাতারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الجَنّةِ.
যে ব্যক্তি ইলমের জন্য পথ চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৪৬
তবে হাঁ, আমি যা জানব সে অনুযায়ী আমল করতে চেষ্টা করব।
আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনী ইলম অর্জনের তাওফীক দিন এবং দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন- আমীন। আল কাউসার।