১০:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
পৌরসভায় তুলনামূলক বিদ্যুৎ থাকলেও

লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ নাঙ্গলকোটবাসী, চরম ক্ষোভ জনমনে!

দিন ও রাতে প্রচণ্ড গরম। এই গরমে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে স্বস্তি পাওয়ার সুযোগও নেই। কারণ, দিনে পাঁচ-ছয়বার লোডশেডিং হচ্ছে। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরের দুই ঘণ্টা থাকে না। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে ব্যবসা-ব্যানিজ্য এমনকি উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে চরমভাবে। বিদ্যুতের এই লুকোচুরির কারণে উপজেলার লাখো বাসিন্দা যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনারও ব্যাঘাত ঘটছে।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে আমজনতার ক্ষোভ ‘এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে তো দুই ঘণ্টাই থাকে না।

বিভিন্ন পর্যায়ের এসব গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিন ৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু হাসানপুর উপকেন্দ্র থেকে ১০-১২ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ দেওয়া হয় না। ফলে উপজেলা সদরসহ পুরো এলকায় দিনে-রাতে পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন গড়ে দশ-বারো ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও একাধিকবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো।

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা। এর ফলে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বেশি বিপাকে পড়েছে চলমান এসএসসি ও দাখিলের পরীক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ যাওয়ায় মধ্যরাতে ভ্যাপসা গরমে ঘুম ভাঙছে এখন নাঙ্গলকোট বাসিন্দাদের। দিনের পাশাপাশি রাতেও কয়েক দফায় এখন বিদ্যুৎ থাকছে না উপজেলার অনেক এলাকায়। ঘন ঘন এই লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পুরো উপজেলার জনজীবন। বিদ্যুৎ না থাকায় কোথাও মোমবাতির আলোয় আবার কোথাও মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে প্রতিদিনের কাজ সারছেন এখানকার বাসিন্দারা। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। কিন্তু দিনশেষে বিদ্যুৎ বিল ঠিক আসছে লাগামহীনভাবে।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ-৪ অফিস সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলা ১ লাখ ৩২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এখানে চাহিদা রয়েছে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। কিছু তারা পাচ্ছে ১২ মেগাওয়াট। ফেনী ও চৌদ্দগ্রাম থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে আসছে। পল্লী বিদ্যুৎ’র এক কর্মকর্তা আমাদের নাঙ্গলকোট কে বলেন; মানুষের দুর্ভোগ চরমে। আমরা প্রতিদিন অনেক ফোন পাই, সবাইকে শান্তনা দেওয়া ভাষা নেই।

সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে নাঙ্গলকোটে ৬-৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এতে এ উপজেলার দোকান, মার্কেট ও শপিং মহলসহ বিভিন্ন কল-কারখানার মালিকরা বিপাককে পড়েছেন। এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও সমস্যায় পড়েছে।

এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকরা ইউপি গোমকোট গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী মাসুদ আলম বলে, সন্ধ্যার পরপরই বিদ্যুৎ চলে যায়। আর আসার খবর থাকে না। এ সয়মটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় আমরা পড়াশোনা করি। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্য দিকে থাকে না বিদ্যুৎ। এভাবে চললে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যাবে না।

নাঙ্গলকোট বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ জহির উদ্দিন বলেন, আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে বা একটু বাতাস হলে নাঙ্গলকোটের বিদ্যুৎ চলে যায়। সেই যে যায় আর আসার খবর থাকে না। প্রতিদিন ৫-৬ বার বিদ্যুৎ যায় আর আসে। রাতেও একই অবস্থা। বিদ্যুৎ না থাকলে ব্যবসাও ভালো হয় না। রাতে ঘুমাতে পারি না। সকালে দোকানে আসলে ঘুমের সমস্যা হয়।

এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এজিএম মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে লাইন পড়ে যায়। এর আগে না। পল্লী বিদ্যুতের সরঞ্জামাদিগুলো নিম্নমানের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছি। তাই লোডশেডিং হচ্ছে। আমাদের কাজ বিদ্যুৎ সরবারহ করা। আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছি ততটুকুই বিতরণ করছি।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ ডিজিএম (টেকনিশিয়ান) আতিকুর রহমান বলেন, প্রচনণ্ড গরমে পুরো বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। যা রমজানের ১০ম দিন থেকে দেখা যায়। বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া ঠান্ডা হলে এ লোডশেডিং সমস্যা শেষ হয়ে যাবে।

লেখকের পরিচিতি

পৌরসভায় তুলনামূলক বিদ্যুৎ থাকলেও

লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ নাঙ্গলকোটবাসী, চরম ক্ষোভ জনমনে!

আপডেট সময় : ১২:৪৯:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩

দিন ও রাতে প্রচণ্ড গরম। এই গরমে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে স্বস্তি পাওয়ার সুযোগও নেই। কারণ, দিনে পাঁচ-ছয়বার লোডশেডিং হচ্ছে। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরের দুই ঘণ্টা থাকে না। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে ব্যবসা-ব্যানিজ্য এমনকি উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে চরমভাবে। বিদ্যুতের এই লুকোচুরির কারণে উপজেলার লাখো বাসিন্দা যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনারও ব্যাঘাত ঘটছে।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে আমজনতার ক্ষোভ ‘এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে তো দুই ঘণ্টাই থাকে না।

বিভিন্ন পর্যায়ের এসব গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিন ৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু হাসানপুর উপকেন্দ্র থেকে ১০-১২ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ দেওয়া হয় না। ফলে উপজেলা সদরসহ পুরো এলকায় দিনে-রাতে পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন গড়ে দশ-বারো ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও একাধিকবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো।

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা। এর ফলে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বেশি বিপাকে পড়েছে চলমান এসএসসি ও দাখিলের পরীক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ যাওয়ায় মধ্যরাতে ভ্যাপসা গরমে ঘুম ভাঙছে এখন নাঙ্গলকোট বাসিন্দাদের। দিনের পাশাপাশি রাতেও কয়েক দফায় এখন বিদ্যুৎ থাকছে না উপজেলার অনেক এলাকায়। ঘন ঘন এই লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পুরো উপজেলার জনজীবন। বিদ্যুৎ না থাকায় কোথাও মোমবাতির আলোয় আবার কোথাও মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে প্রতিদিনের কাজ সারছেন এখানকার বাসিন্দারা। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। কিন্তু দিনশেষে বিদ্যুৎ বিল ঠিক আসছে লাগামহীনভাবে।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ-৪ অফিস সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলা ১ লাখ ৩২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এখানে চাহিদা রয়েছে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। কিছু তারা পাচ্ছে ১২ মেগাওয়াট। ফেনী ও চৌদ্দগ্রাম থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে আসছে। পল্লী বিদ্যুৎ’র এক কর্মকর্তা আমাদের নাঙ্গলকোট কে বলেন; মানুষের দুর্ভোগ চরমে। আমরা প্রতিদিন অনেক ফোন পাই, সবাইকে শান্তনা দেওয়া ভাষা নেই।

সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে নাঙ্গলকোটে ৬-৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এতে এ উপজেলার দোকান, মার্কেট ও শপিং মহলসহ বিভিন্ন কল-কারখানার মালিকরা বিপাককে পড়েছেন। এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও সমস্যায় পড়েছে।

এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকরা ইউপি গোমকোট গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী মাসুদ আলম বলে, সন্ধ্যার পরপরই বিদ্যুৎ চলে যায়। আর আসার খবর থাকে না। এ সয়মটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় আমরা পড়াশোনা করি। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্য দিকে থাকে না বিদ্যুৎ। এভাবে চললে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যাবে না।

নাঙ্গলকোট বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ জহির উদ্দিন বলেন, আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে বা একটু বাতাস হলে নাঙ্গলকোটের বিদ্যুৎ চলে যায়। সেই যে যায় আর আসার খবর থাকে না। প্রতিদিন ৫-৬ বার বিদ্যুৎ যায় আর আসে। রাতেও একই অবস্থা। বিদ্যুৎ না থাকলে ব্যবসাও ভালো হয় না। রাতে ঘুমাতে পারি না। সকালে দোকানে আসলে ঘুমের সমস্যা হয়।

এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এজিএম মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে লাইন পড়ে যায়। এর আগে না। পল্লী বিদ্যুতের সরঞ্জামাদিগুলো নিম্নমানের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছি। তাই লোডশেডিং হচ্ছে। আমাদের কাজ বিদ্যুৎ সরবারহ করা। আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছি ততটুকুই বিতরণ করছি।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ ডিজিএম (টেকনিশিয়ান) আতিকুর রহমান বলেন, প্রচনণ্ড গরমে পুরো বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। যা রমজানের ১০ম দিন থেকে দেখা যায়। বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া ঠান্ডা হলে এ লোডশেডিং সমস্যা শেষ হয়ে যাবে।