বলা হয়, এখন সময়টা ‘নেটওয়ার্কিং’ এর। যোগাযোগ যত বাড়াবেন, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা পদোন্নতির ক্ষেত্রে আপনি তত এগিয়ে থাকবেন। ছাত্রজীবন থেকেই কীভাবে নেটওয়ার্কিংয়ের চর্চা করা যায়? পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সাইফ নোমান খান
১. প্রথমেই নিজের বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, পাড়াপ্রতিবেশী আর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। তাঁরা যে পেশায় যুক্ত, আলাপের মাধ্যমে সে সম্পর্কে ভালো করে ধারণা নিন। সে অনুসারে নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করুন।
২. পেশাজীবী যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইন (linkedin. com)-এ প্রোফাইল তৈরি করুন। এই মাধ্যম ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে পারেন। প্রয়োজনে লিংকডইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ বিভাগের কর্মীর কাছে প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পর্কে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করুন। বহির্বিশ্বে এই চর্চাটা খুব প্রচলিত।
৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন ফেসবুক বা টুইটারের মাধ্যমেও আপনি এই যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, এই যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে আপনার নিজের প্রোফাইলে যথাসম্ভব স্মার্ট ও পেশাদার রূপ থাকতে হবে। আপনার প্রোফাইল দেখেই যেন আপনার সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা না হয়। সুন্দর ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন থাকলেই লোকে আপনার সম্পর্কে আগ্রহী হবে।
৪. নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই-বোন বা অ্যালামনাইরা নেটওয়ার্কিংয়ের একটা বড় ক্ষেত্র। এখনকার সময়ে সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক বা নিজেদের বিভাগভিত্তিক বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ থাকে। এই ধরনের গ্রুপগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা যেতে পারে।
৫. ছাত্রাবস্থায় অনেকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখার বা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়ে থাকে। এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পেশাজীবীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া উচিত।
৬. অনেক সময় ক্যাম্পাসেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সেমিনার, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই ধরনের অনুষ্ঠানে অধিকাংশ সময় ওই সকল প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিয়েও পরিচিতি বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। অনুষ্ঠান শেষ হলেই চট করে চলে আসবেন না। চা খেতে খেতেও কারও সঙ্গে পরিচয় হতে পারে, একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সেরে নেওয়া যেতে পারে।
৭. মার্কেটিং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, মার্কেটিয়ারস ফোরাম, ব্র্যান্ড ফোরাম…এই ধরনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু অনুষ্ঠান হয়, যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবীর অংশগ্রহণ থাকে। এসব অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারেন। এতে করে অতিথিদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
৮. আপনি যে কোনো অনুষ্ঠানেই যান না কেন, হতে পারে সেটা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান বা জন্মদিনের অনুষ্ঠান, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মানসিকতা আপনার থাকতে হবে। হয়তো কাজের সুযোগ তৈরি হবে না, কিন্তু আপনার জানার পরিধি বাড়বে। কারও সঙ্গে পরিচয় হলো, পরে তাঁর সঙ্গে দেখা হলে এড়িয়ে যাবেন না। কথা বলুন। সম্পর্কটা ধরে রাখুন।
৯. আপনার আগ্রহের জায়গা হতে পারে নানা কিছু। ফটোগ্রাফি, বই পড়া, বেড়াতে যাওয়া কিংবা রোবটিকস। আগ্রহের বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অনেক ধরনের ফেসবুক গ্রুপ আছে। মাঝেমধ্যেই এই গ্রুপগুলো একসঙ্গে বিভিন্ন প্রদর্শনী, মিলনমেলা বা ভ্রমণের পরিকল্পনা করে। এই সুযোগগুলো কাজে লাগান। আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনার আগ্রহের কথা প্রকাশ করুন।
১০. নিজের একটা ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলুন। আপনি যদি সুন্দর করে কথা বলার চর্চা করেন, বিভিন্ন পরিবেশে আলাপ আলোচনার আদবকেতা জানেন, সহজাতভাবেই অনেকের সঙ্গে আপনার সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। পেশাজীবনে যা আপনার কাজে লাগবে।