০২:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সব মিলিয়ে গত ২০ বছরে অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন

নাঙ্গলকোটে এক কিলোমিটারে তিনটি অবৈধ রেলক্রসিং!

অবৈধ রেলক্রসিং দিয়ে মানুষের চলাচল। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বান্নগরে

‘সাবধান! এই স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ’ সাইনবোর্ডে সচেতনতামূলক বক্তব্যটি লিখেই দায় সেরেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের কুমিল্লার নাঙ্গলকোট অংশের বান্নগর এলাকার দৃশ্য এটি। এই এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত তিনটি অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে। বিপজ্জনক এসব রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে গত এক বছরে আটজন মারা গেছেন। বিগত বছরগুলোর হিসাব আরো বহুগুন বেশি। দিনদিন এর পরিমাণ বাড়ছে অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের নেই কোন মাথা ব্যাথা।

সব মিলিয়ে গত ২০ বছরে অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন। এ অবস্থায় ওই এলাকায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক ও প্রহরীর (গেটম্যান) দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সবশেষ গত ২৯ জানুয়ারি মোটরসাইকেল নিয়ে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় চাঁদপুর–চট্টগ্রাম রুটের সাগরিকা ট্রেনের ধাক্কায় ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেনের (২৫) মৃত্যু হয়। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে বান্নগর উত্তরপাড়া রেলক্রসিংয়ে একটি খুঁটি পুঁতে দেয়।

বান্নগর গ্রামের রেলক্রসিংগুলো ঘুরে দেখা, গ্রামের ভেতর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ চলে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের ১১৯/১ থেকে ১১৯/৮ পিলার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি অবৈধ রেলক্রসিং। রেলপথের বান্নগর উত্তরপাড়া রেলক্রসিংয়ের দিয়ে মক্রবপুর-হেসাখাল সড়ক এবং মধ্যপাড়া রেলক্রসিং দিয়ে মক্রবপুর-দায়েমছাতি সড়ক চলে গেছে। মক্রবপুর ও হেসাখাল ইউনিয়নের প্রায় আটটি গ্রামের মানুষকে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে যেতে হলে এ দুটি সড়ক ব্যবহার করতে হয়।

বান্নগর দক্ষিণপাড়ায় বান্নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বান্নগর পূর্বপাড়া, উত্তরপাড়া ও পশ্চিমপাড়ার শতাধিক ছেলেমেয়ে ঝুঁকি নিয়ে রেলক্রসিং পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। বান্নগর উত্তরপাড়া রেলক্রসিং সড়কের পশ্চিম দিকে দুটি অবৈধ দোকান আছে। এ ছাড়া সড়কের পাশে বাঁশঝাড় ও গাছপালার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।

বান্নগর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম সালাউদ্দিন বলেন, অবৈধ দোকান আর গাছপালার কারণে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কোনো ট্রেন আসছে কি না, সেটা হেসাখাল সড়ক থেকে দেখা যায় না, ফলে অনেক পথচারী ও যানবাহন সড়ক থেকে রেললাইনের ওপর উঠে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় লোকজন বান্নগর গ্রামে অন্তত দুটি রেলগেট নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও রেলগেট নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। কয়েক মাস আগে একটি মানববন্ধন করেও প্রশাসনের টনক নড়াতে পারিনি আমরা।

জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক প্রকৌশলী বলেন, ঢালাই করে রেলপথের ওপর হেসাখাল সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অবৈধ দোকানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হানিফ বলেন, ২০১৮ সালে বৈধ রেলগেট নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে। শিগগিরই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সঙ্গে আলোচনা করে জরিপ করে অবৈধ রেলক্রসিংগুলোর তালিকা করা হবে। পরে সেগুলো বৈধকরণের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

লেখকের পরিচিতি

ভয়াবহ বন্যায় নাঙ্গলকোটের সিংহভাগ সড়ক বিধ্বস্ত!

সব মিলিয়ে গত ২০ বছরে অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন

নাঙ্গলকোটে এক কিলোমিটারে তিনটি অবৈধ রেলক্রসিং!

আপডেট সময় : ০৭:০৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১

‘সাবধান! এই স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ’ সাইনবোর্ডে সচেতনতামূলক বক্তব্যটি লিখেই দায় সেরেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের কুমিল্লার নাঙ্গলকোট অংশের বান্নগর এলাকার দৃশ্য এটি। এই এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত তিনটি অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে। বিপজ্জনক এসব রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে গত এক বছরে আটজন মারা গেছেন। বিগত বছরগুলোর হিসাব আরো বহুগুন বেশি। দিনদিন এর পরিমাণ বাড়ছে অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের নেই কোন মাথা ব্যাথা।

সব মিলিয়ে গত ২০ বছরে অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন। এ অবস্থায় ওই এলাকায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক ও প্রহরীর (গেটম্যান) দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সবশেষ গত ২৯ জানুয়ারি মোটরসাইকেল নিয়ে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় চাঁদপুর–চট্টগ্রাম রুটের সাগরিকা ট্রেনের ধাক্কায় ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেনের (২৫) মৃত্যু হয়। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে বান্নগর উত্তরপাড়া রেলক্রসিংয়ে একটি খুঁটি পুঁতে দেয়।

বান্নগর গ্রামের রেলক্রসিংগুলো ঘুরে দেখা, গ্রামের ভেতর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ চলে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের ১১৯/১ থেকে ১১৯/৮ পিলার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি অবৈধ রেলক্রসিং। রেলপথের বান্নগর উত্তরপাড়া রেলক্রসিংয়ের দিয়ে মক্রবপুর-হেসাখাল সড়ক এবং মধ্যপাড়া রেলক্রসিং দিয়ে মক্রবপুর-দায়েমছাতি সড়ক চলে গেছে। মক্রবপুর ও হেসাখাল ইউনিয়নের প্রায় আটটি গ্রামের মানুষকে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে যেতে হলে এ দুটি সড়ক ব্যবহার করতে হয়।

বান্নগর দক্ষিণপাড়ায় বান্নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বান্নগর পূর্বপাড়া, উত্তরপাড়া ও পশ্চিমপাড়ার শতাধিক ছেলেমেয়ে ঝুঁকি নিয়ে রেলক্রসিং পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। বান্নগর উত্তরপাড়া রেলক্রসিং সড়কের পশ্চিম দিকে দুটি অবৈধ দোকান আছে। এ ছাড়া সড়কের পাশে বাঁশঝাড় ও গাছপালার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।

বান্নগর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম সালাউদ্দিন বলেন, অবৈধ দোকান আর গাছপালার কারণে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কোনো ট্রেন আসছে কি না, সেটা হেসাখাল সড়ক থেকে দেখা যায় না, ফলে অনেক পথচারী ও যানবাহন সড়ক থেকে রেললাইনের ওপর উঠে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় লোকজন বান্নগর গ্রামে অন্তত দুটি রেলগেট নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও রেলগেট নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। কয়েক মাস আগে একটি মানববন্ধন করেও প্রশাসনের টনক নড়াতে পারিনি আমরা।

জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক প্রকৌশলী বলেন, ঢালাই করে রেলপথের ওপর হেসাখাল সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অবৈধ দোকানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হানিফ বলেন, ২০১৮ সালে বৈধ রেলগেট নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে। শিগগিরই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সঙ্গে আলোচনা করে জরিপ করে অবৈধ রেলক্রসিংগুলোর তালিকা করা হবে। পরে সেগুলো বৈধকরণের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হবে।